ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৫/০৫/২০২৪ ৯:৪৫ এএম , আপডেট: ০৫/০৫/২০২৪ ১০:০৫ এএম

মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে নিজেদের জাতিসত্তার স্বীকৃতি আদায় এবং রাখাইন রাজ্যে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে লড়াই করছে রাখাইনভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি। রোহিঙ্গাদের অন্তত ১২টি সশস্ত্র গোষ্ঠীও বিভিন্ন সময়ে এমন দাবির কথা বলেছে। তবে গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যেই খুনখারাবিতে লিপ্ত। রাখাইনে কয়েকটি রোহিঙ্গা গোষ্ঠী সম্প্রতি আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দিতে চেয়েও পাত্তা পায়নি। উল্টো সীমান্ত এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে থাকা রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোকেও আরাকান আর্মি হটিয়ে দিয়েছে।

জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে তারা রাখাইনের অর্ধেকের মতো এলাকা দখল করে নিয়েছে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রোহিঙ্গাদের নবী হোসেন গ্রুপ রাখাইনের ঢেকিবুনিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) একটি ছাউনি দখল করে নিয়েছিল। তখন আরাকান আর্মিও ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে লড়াই করতে করতে ঢেকিবুনিয়ার দিকে এগোচ্ছিল। এক দিন পরই নবী গ্রুপ ও বিজিপিকে হটিয়ে তারা ঢেকিবুনিয়া ছাউনি দখলে নেয়। তখন বিজিপির ১০৪ এবং নবী গ্রুপের ২৩ জন পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন জানান, নবী গ্রুপের ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, নবী গ্রুপ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের অন্তত ১১টি সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। আলোচিত অন্য গোষ্ঠীগুলো হলো আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), মুন্না গ্রুপ, আইয়ুব মাস্টার গ্রুপ ও আল-ইয়াকিন গ্রুপ। তারা মুখে রোহিঙ্গাদের অধিকারের কথা বললেও কার্যত সীমান্ত দিয়ে মাদকদ্রব্য, গরুসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানে লিপ্ত। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায়ই ধরাও পড়ে। র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে ৯৮ এবং ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ জন রোহিঙ্গা অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা যায়, আরসাও একসময় আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক থাকার দাবি করেছিল। তবে আরাকান আর্মি সেই দাবির সত্যতা স্বীকার করেনি। আরাকান আর্মি সে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বললেও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কিছু বলেনি। এর কারণ জানতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আরাকান আর্মিকে ই-মেইল করা হলেও তারা জবাব দেয়নি। তবে আরাকান আর্মির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মিয়ানমারের থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত তিনটি জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন ছাড়া আর কাউকে তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে না। আরাকান আর্মি ছাড়া অন্য দুটি হলো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি।

বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো ২০১৭ সালের পর রাখাইনে নিজেদের অধিকার আদায়ে কিছু করেছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। সে কারণেই আরাকান আর্মি রাখাইনে সফলতার ভাগ তাদের দিতে চাইছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রাখাইনে আরাকানিয়ানদের চেয়ে রোহিঙ্গারা বেশি সময় ধরে নির্যাতনের শিকার; কিন্তু তারা দাবি আদায়ের জন্য কিছু করতে পারেনি। এর কারণ হলো, তাদের মধ্যে ঐক্য ও নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোক নেই। তাদের সশস্ত্র গ্রুপগুলো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। সেই সুযোগে আরাকান আর্মি আন্তর্জাতিক মহলেও একটি জায়গা করে নিয়েছে।

দলাদলির বিষয়টি নিয়ে এখন রোহিঙ্গাদের মধ্যে সমালোচনা হচ্ছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা রাখাইনে শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইছি, কিন্তু তা হচ্ছে না। আমাদের হয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো কেবল কথা বলতে পারে, এ ছাড়া আর কোনো গ্রুপ এই মুহূর্তে সক্রিয় নেই।’

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর শক্ত অবস্থান থাকলে আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকার উভয়েই তাদের সঙ্গে বসতে চাইত; সেই অবস্থান তাদের নেই। তার পরও ইদানীং জান্তা সরকার রোহিঙ্গা তরুণদের জোর করে সামরিক বাহিনীতে ঢোকাচ্ছে, এটাও একধরনের স্বীকৃতি। যদিও এতে রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে, তবে জান্তার এই সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীতও হতে পারে। কারণ রোহিঙ্গারা জান্তা বাহিনী থেকে বেরিয়ে আরাকান আর্মিতে গেলে তাদের সামাল দেওয়া আরও কঠিন হবে। সুত্র : আজকের পত্রিকা

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে হচ্ছে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার বাংলাদেশের সব নাগরিকের রয়েছে, এটা সংবিধানে গ্যারান্টি ...

ইনানীতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

অবশেষে কক্সবাজারে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন। অর্থনৈতিক এবং ...